Thursday, October 6, 2016

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর ইতিকথা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (বাংলা অর্থ: বাংলাদেশ গণসংঘ)।
বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল। এই রাজনৈতিক দলটির গোড়াপত্তন হয় ২৩ জুন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। পরবর্তী কালে এর নাম ছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সাল থেকে এর নির্বাচনী প্রতীক নৌকা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ পরিচিত। ১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এই সংগঠনটির নামাকরণ করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

প্রতিষ্ঠাঃ
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেমের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের একাংশের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ' প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। পরবর্তীকালে, ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে পরে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নাম রাখা হয়: 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ'।

আওয়ামী লীগের জন্মসূত্রের সঙ্গে ঢাকা ১৫০ নম্বর মোগলটুলিস্থ পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরের উদ্যোগের সম্পর্ক অনস্বীকার্য। ২৩ জুনের সম্মেলনের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন শওকত আলী। তার উদ্যোগে ১৫০ নং মোগলটুলিস্থ শওকত আলীর বাসভবন এবং কর্মী শিবির অফিসকে ঘিরে বেশ কয়েক মাসের প্রস্তুতিমূলক তৎপরতার পর ২৩ জুনের কর্মী সম্মেলনে দলের ঘোষণা দেয়া হয়। শওকত আলীর অনুরোধে কলকাতা থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একটি মামলা পরিচালনার কাজে ঢাকায় এলে তিনি শওকত আলীকে মুসলিম লীগ ছেড়ে ভিন্ন একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। শওকত আলী এ পরামর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরের নেতৃবৃন্দকে নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেন। এসময় কর্মী শিবিরের প্রধান নেতা ছিলেন শামসুল হক। কামরুদ্দীন আহমদ, মো. তোয়াহা, অলি আহাদ, তাজউদ্দীন আহমদ, আতাউর রহমান খান, আবদুল আউয়াল, মুহম্মদ আলমাস, শামসুজ্জোহা প্রমুখ প্রথম দিকে এবং পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান কর্মী শিবির কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মতৎপরতায় বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন। মুসলিম লীগের আবুল হাশিম-সোহরাওয়ার্দী গ্রুপ নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগের অন্যায় কাজগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যেই এখানে কর্মী শিবির গড়ে তুলেছিলেন। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৪৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে ঢাকা এলে তার সঙ্গে শওকত আলীর আলোচনা হয়। শওকত আলী মওলানাকে পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরকেন্দ্রিক রাজনৈতিক তৎপরতার কথা জানান। এসময় মওলানা ভাসানী আলী আমজাদ খানের বাসায় অবস্থান করছিলেন। শওকত আলীর সঙ্গে তার প্রাথমিক আলোচনা সেখানেই হয়। এই আলোচনার সূত্র ধরে নতুন দল গঠনের জন্য একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন শওকত আলী। সেজন্যে ১৫০ নম্বর মোগলটুলিতে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। মওলানা ভাসানী সেই বৈঠকে যোগদান করেন। এসময় খোন্দকার আবদুল হামিদের সঙ্গে পরামর্শ করে শওকত আলীর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, ইয়ার মুহম্মদ খানকে সম্পাদক এবং খন্দকার মুশতাক আহমদকে দপ্তর সম্পাদক করে অন্যদেরসহ একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হয়।

উপরোক্ত সাংগঠনিক কমিটি ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে এক সম্মেলন আহ্বান করে। রোজ গার্ডেনে ২৩ জুনের বিকেল ৩টায় সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন শামসুল হক, শওকত আলী, আনোয়ারা খাতুন, ফজলুল কাদের চৌধুরী, আবদুল জব্বার খদ্দর, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আতাউর রহমান খান, মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, আলী আমজাদ খান, শামসুদ্দীন আহমদ(কুষ্টিয়া), ইয়ার মুহম্মদ খান, মওলানা শামসুল হক, মওলানা এয়াকুব শরীফ, আবদুর রশিদ প্রমুখ।

প্রতিষ্ঠাকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি হন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সহ-সভাপতি হন আতাউর রহমান খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আলী আহমদ। টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে রফিকুল হোসেনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোষাধ্যক্ষ হন ইয়ার মোহাম্মদ খান। এসময় শেখ মুজিব কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। অন্যদিকে, পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

২৪জুন বিকেলে নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রকাশ্যে জনসভা করে। সভায় আনুমানিক প্রায় চার হাজার লোক উপস্থিত হয়।

১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার 'মুকুল' প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব। উল্লেখ্য যে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ছিলো তৎকালীন পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। শুরুর দিকে দলটির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি, এক ব্যাক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দু'অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে আওয়ামী মুসলিম লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর দলটি কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।

১৯৫৪ সালের মার্চের আট থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান পরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি মুসলিম আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পায়। এরমধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ।

২৪ বছরের পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী মুসলিম লীগ আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে দু'বছর প্রদেশে ক্ষমতাসীন ছিল এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ১৩ মাস কোয়ালিশন সরকারের অংশীদার ছিল।

১৯৫৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের তৃতীয় সম্মেলনে দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়; নতুন নাম রাখা হয়: 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ'।

পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে মতপার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালে দল ভাঙন দেখা দেয়। ওই বছরের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি কাগমারি সম্মেলনে দলে বিভক্তির ঘটনা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় মাওলানা ভাসানী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।[৫]

মূলনীতিঃ
বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা তথা সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং সমাজতন্ত্র তথা শোষণমুক্ত সমাজ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মূলনীতি।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
ক) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংহত করা এবং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সমুন্নত রাখা।
খ) প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করা। 
গ) রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি এবং কল্যাণ নিশ্চিত করা। 
ঘ) মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা।

পররাষ্ট্রনীতিঃ
সকলের সাথে বন্ধুত্ব। কারও প্রভুত্ব নয়, কারো সাথে বৈরিতা নয়।

অঙ্গীকারঃ
একটি উন্নত, সমৃদ্ধ কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প সম্বলিত এই ঘোষণাপত্র ও কর্মসূচির মৌলিক লক্ষ্য ও অঙ্গীকার হইবে-
১। স্বাধীনতার আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা।
২। মানবসত্তার মর্যাদা ও মানবিক মূল্যবোধের স্বীকৃতি।
৩। বাংলাদেশের জনগণের ঐক্য ও সংহতির বিধান।
৪। সংসদীয় গনতন্ত্রের সুস্থ বিকাশ ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান। জনগণের পছন্দমতো ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
৫। একটি গণমুখী, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক দক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা।
৬। তৃণমূল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার সকল স্তরে জনগণের অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা।
৭। নর-নারী, ধর্ম-বর্ণ, সম্প্রদায়, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা নির্বিশেষে মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান এবং তাদের উন্নত জীবন বিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ প্রদান।
৮। ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিলোপ সাধন।
৯। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ। সন্ত্রাস ও দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠন।
১০। নারী নির্যাতন বন্ধ, নারীর অধিকার ও মর্যাদা সংরক্ষণ এবং রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ সুনিশ্চিতকরণ।
১১। শিশুর অধিকার সংরক্ষণ, তাদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগের নিশ্চয়তা বিধান এবং যুব সমাজের উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
১২। সংবাদপত্রসহ সকল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা।
১৩। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ মানুষের জীবন ধারণের মৌলিক সমস্যার সমাধান এবং কর্মের অধিকার এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা।
১৪। অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার অবসান, দারিদ্র্য বিমোচন, অধিকতর কর্মসংস্থান, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, একপাক্ষিক বৈদেশিক নির্ভরশীলতা কাটানো, ব্যাক্তিখাত এবং রাষ্ট্রীয় ও ব্যাক্তিখাতের যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি) উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ উৎসাহিত করা। একটি শিল্পসমৃদ্ধ জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তি রচনা করা।
১৫। সর্বাঙ্গীণ গ্রামীণ-উন্নয়ন, ভূমি ও কৃষিব্যবস্থার আমূল সংস্কার, কৃষিতে বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা, আধুনিকায়ন, কৃষিতে টেকসই প্রযুক্তির ব্যবস্থা এবং সমবায় ব্যবস্থা বহুমুখীকরণ ও ফলপ্রসূ করা।
১৬। খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতার ধারা অব্যাহত রাখিয়া জনগণের খাদ্যের অধিকার তথা ভাতের অধিকার নিশ্চিত করা, কৃষিপণ্যের লাভজনক দামের নিশ্চয়তা বিধান।
১৭। জাতীয় স্বার্থে প্রাকৃতিক সম্পদের যুক্তিসংগত ব্যবহার নিশ্চিত করা, দীর্ঘমেয়াদী জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা, বিদ্যুতায়ন, যোগাযোগ, আইটি খাতসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন।
১৮। মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান। সমাজের প্রয়োজনের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ সার্বজনীন, সুলভ ও প্রগতিশীল শিক্ষানীতি এবং ব্যবস্থার প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ধারাকে উৎসাহিতকরণ।
১৯। বাঙালি জাতির সভ্যতা, কৃষ্টি, ভাষা এবং শিল্প সাহিত্যের বিকাশ নিশ্চিতকরণ। দেশের আদিবাসী, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও উপজাতীয় জনগণের জীবনধারা, ভাষা-সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও বিকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা।
২০। শ্রমজীবী, সমাজের দুর্বল, অনগ্রসর, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে মানবেতর জীবন হইতে উত্তরণে সার্বিক সহায়তা প্রদান। পঙ্গু, অসহায়, বিধবা, দরিদ্র, বয়স্ক, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা।
২১। বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান বিপদ মোকাবিলায় বৈশ্বিক ও দেশীয় উদ্যোগ গ্রহণ। পানিসম্পদের প্রাপ্যতা, সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যাবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ। পরিবেশ সংরক্ষণ, বন সৃজন ও সামাজিক বনায়ন সম্প্রসারণে উৎসাহিত করা, প্রাণী বৈচিত্র্য রক্ষা এবং গ্রিন হাউজ এফেক্ট রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
২২। অপরিকল্পিত নগরায়ণ রোধ, শহরাঞ্চলে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং গ্রাম ও শহরের বৈষম্য দূর করা। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত পরিকল্পিত গ্রামীণ জনপদ গড়িয়া তোলা।
২৩। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও বিশ্বশান্তি রক্ষার লক্ষ্যে আধুনিক, যুগোপযোগী ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা।
২৪। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বৈদেশিক নীতির ভিত্তি হবে সকলের সহিত বন্ধুত্ব, কারো সহিত বৈরিতা নয়। বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার সকল প্রচেষ্টায় সাহায্য ও সহযোগিতা করা এবং সন্ত্রাসবাদ, বর্ণবৈষম্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বিশ্বের সর্বত্র নিপীড়িত জাতি ও জনগণের ন্যায়সঙ্গত মুক্তিসংগ্রামকে সমর্থন করা।
উল্লিখিত লক্ষ্যে ও উদ্দেশ্যে বর্ণিত প্রস্তাবনা, মূলনীতি ও অঙ্গীকার অনুসরণ এবং বাস্তবায়নে জাতীয় ঐক্য, উদ্দীপনা এবং নবজাগরণ সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগ সর্বদা সচেষ্ট থাকিবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরাধ্য এক উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অবিচল নিষ্ঠা, সততা, শৃঙ্খলা ও দৃঢ়তার সহিত আত্মনিয়োগ করিবে।



আন্দোলনঃ

৬ দফা আন্দোলনঃ
ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৬৬ সালে ৫ ও ৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি Federal বা যৌথরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে এই Federation বা যৌথরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয় দফার সমর্থনে সর্ব প্রথম চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লালদিঘীর পাড়ে চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর তৎকালীন বৃহত্তর চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্টাতা সাধারণ সম্পাদক এক দফার প্রবক্তা চট্টল শার্দূল জননেতা মরহুম এম এ আজিজের নেত্রীত্বে প্রথম প্রকাশ্যে সভা করেন বঙ্গবন্ধু। সেই সভায় মরহুম এম এ আজিজ ঘোষনা করেন যে ছয় দফা না মানলে এক দফার আন্দোলন চলবে, সেটা হচ্ছে স্বাধীনতার আন্দোলন।পরবর্তীতে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করা হয়।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনীতিক সংগ্রামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। এই সময়ে শেখ মুজিব এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ আরো কিছু ছাত্র সংগঠন এক সাথে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে তাদের ঐতিহাসিক এগারো দফা কর্মসূচী পেশ করেন যা মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে হিসেবে সহায়তা করে।

একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনঃ
গণআন্দোলন ও আইয়ুবের পতনের পটভূমিতে '৭০ এর নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আইনসভায় (জাতীয় পরিষদ) পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন দখল করে আওয়ামী লীগ ৩১৩ আসন-বিশিষ্ট পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং সরকার গঠনে ও শাসনতন্ত্র প্রণয়নের যোগ্যতা অর্জন করে। প্রাদেশিক পরিষদের আসনের মধ্যে ২৮৮ আসন পায় দলটি। জাতীয় পরিষদের সাতটি মহিলা আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের দশটি মহিলা আসনের সবগুলোতেই জয়ী হয় আওয়ামী লীগ।

সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানানোর পরিবর্তে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে বাঙালির অধিকার নস্যাৎ করার পথ বেছে নেয়।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনঃ
১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে। এই আন্দোলন চলাকালে ১০ই নভেম্বর পুলিশের গুলিতে যুবলীগ কর্মী নূর হোসেন নিহত হন।


সরকার গঠনঃ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট-সরকার গঠন করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬৯ আসনের মধ্যে ২৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ও শোষণের ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০টি আসন লাভ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে। ২০১৪ সালের ৫জানুয়ারী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে পূণরায় সরকার গঠন করে।

No comments:

Post a Comment