Sunday, October 9, 2016

শাহজালাল এয়ারপোর্ট, রেডিসন হোটেল, মিরপুর স্টেডিয়াম দেখেছো; টাইগারদের দেখনি ! অভিনন্দন টাইগারস

বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ডের ৩ ম্যাচ সিরিজে স্বাগতিগরা গত শুক্রবার প্রথম ম্যাচে হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দায়িত্বশীল ব্যাটিং আর চমৎকার বলিং এর মধ্য দিয়ে সিরিজে ১-১ সমতা রক্ষা করে বাংলাদেশ।

শুরুর দিকে ব্যাটিং তেমন ভালো করতে না পারলেও, গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে দলের  হাল ধরেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আবারো ছন্দপতন, প্যাভিলিয়নে ফেরার তাড়া। তবে, মাশরাফিও নিজের জাত চিনালেন ইংল্যান্ডকে। শেষ পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহর ৭৭ ও মাশরাফির ৪৪ রানে ২৩৮ রানের পুঁজি করে বাংলাদেশ।

জবাবে ব্যাটিং এ নেমে আগের ম্যাচের সাথে ইংল্যান্ডকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেন হারের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাটিং করতে নেমেছে। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধসে মিরপুরের দর্শকরা বারবার উল্লাসের ধ্বনি দিচ্ছিলো। নাসিরের নৈপুণ্য, তাসকিনের ধারালো বল, আর মাশরাফির যোগ্য নেতৃত্ব ৩৪ রানে জয় লাভ করে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে এ জয় বাংলাদেশরই প্রাপ্য।

ইংল্যান্ড আগের ম্যাচে ধৈর্য হারানো বাংলাদেশকে হয়তো দেখেছে, কিন্তু অদম্য বাংলাদেশকে দেখেনি। তাই নির্দ্বিদায় বলতে হয়- শাহজালাল এয়ারপোর্ট, রেডিসন হোটেল, মিরপুর স্টেডিয়াম দেখেছো; টাইগারদের দেখনি !

অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

বিশ্বের ৩ জন সফল ব্যক্তির হার না মানা গল্প

১। বিল গেটসঃ
সহ-প্রতিষ্ঠাতা, মাইক্রোসট।
সম্পদের পরিমাণঃ ৭২৭ কোটি ডলার।


বিশ্বের সবথেকে ধনী ব্যক্তি হওয়ার আগে বিল গেটস ছিলেন একজন ব্যর্থ উদ্যোক্তা।   পরবর্তীতে কঠোর পরিশ্রমের ফলে তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হন এবং তার বিলাস বহুল বাড়ি  Xanadu 2.0 (the ‘Bill Gates House’) যেটা কম্পিউটার এবং সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত, মিউজিক এবং লাইটেরও লক্ষণীয় ব্যবহার আছে বাড়িটিতে।

ব্যর্থতাঃ
প্রথমে ট্রাফ-ও-ডাটা নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল বিল গেটসের, যেটা ট্রাফিক কাউন্টার এবং ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারদের রিপোর্ট তৈরি করতো। এভাবে এই প্রতিষ্ঠান ট্রাফিককে হেল্প করতো। মূলত ট্রাফ-ও-ডাটা ৮০০৮ নামে এই অ্যাপ যা ট্রাফিক টেপ পড়তে পারতো এবং সেই ডাটা প্রসেস করতো। তারা এই পণ্য বিক্রি করতে শুরু করলো দেশের ভেতর কিন্তু তারা ব্যর্থ হন, কারণ যন্ত্রটা সঠিক ভাবে সবসময় কাজ করতে পারতো না।

অতঃপর সফলতাঃ
বিল গেটসের সহযোগী পল অ্যালেন জানান যদিও ট্রাফ-ও-ডাটা ভালোভাবে কাজ করতো না, তবে এর থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা কয়েক বছরের মধ্যে তাঁকে মাইক্রোসফট গড়তে সহায়তা করেছিল।

এভাবেই একদিন মাইক্রোসফট বিশ্বের সবথেকে বড় পার্সোনাল কম্পিউটার অপেরেটর হয়ে উঠে।

২) নিক উডম্যানঃ
প্রতিষ্ঠাতাঃ GoPro
সম্পদের পরিমাণঃ ১৭৫ কোটি ডলার


নিক ছিলেন পড়াশোনায় একজন বি ক্যাটাগরির স্টুডেন্ট। তিনি বিলিয়নিয়ার হিসাবে জন্মগ্রহণ
করেননি। বর্তমানে তার GoPro ক্যামেরা প্রতিষ্ঠানের আগে তার দুইটা অনলাইন উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।

ব্যর্থতাঃ
প্রথমে তিনি ইম্পেয়ারওয়ল নামে যে ই-কমার্স সাইট তৈরি করেন, যেখানে তিনি কম মূল্যের ইলেক্ট্রনিকস পণ্য সেল করতেন। কোম্পানি খুব ভালো করতে পারছিল না, ফলে তিনি লছ করছিলেন, যেকারণে তিনি এই প্রতিষ্ঠান  বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে  তিনি ফানবাগ নামে অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই ওয়েব ছিল গেম নিয়ে কাজ। গেমের মাধ্যমে তিনি বিজনেস করতেন। যারা অংশগ্রহণ করতো তাদের ক্যাশপ্রাইজ দিতেন। এই কোম্পানি ৩.৯ মিলিয়ন অর্থ সংগ্রহ করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে। কিন্তু ২০০১ সালে তিনি ব্যর্থ হতেই থাকেন। তিনি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক পাচ্ছিলেন না। যেকারনে তিনি এটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। এই বিজনেস থেকে তিনি ৪ মিলিয়ন ডলার লছ খান।

অবশেষে সফলতাঃ
দুইটি কোম্পানিতে লসের কারণে তিনি একটু ক্লান্ত হয়েছিলেন, যেকারনে তিনি রিফ্রেশমেন্টের জন্য দূরে বেড়াতে যান এবং সেখান থেকে ফিরে এই গোপ্রো ক্যামেরা নিয়ে কাজ শুরু করেন। বিশেষ করে যারা ভ্রমন প্রিয় এবং অ্যাথলেট। যদিও তিনি অনেক বার বলেছেন এই সময় তিনি অনেক ঝুঁকিতে থাকতেন এবং তা থেকে তিনি বের হতে চাইতেন।

অবশেষে তিনি বিশ্বের সবথেকে কমবয়সী বিলিয়নিয়ার হয়ে উঠেন এবং তার কোম্পানি গোপ্রো ছিল অ্যামেরিকার সবথেকে দ্রুত বেড়ে উঠা কোম্পানি।

৩। স্টিভ জবসঃ
সহ-প্রতিষ্ঠাতা, অ্যাপেল।
সম্পদের পরিমানঃ ১০২ কোটি ডলার।


স্টিভ জবসকে বলা হয় উদ্যোক্তাদের গুরু, যিনি সর্বাধিক বিক্রি হওয়া আইপ্যাড, আইফোন, অ্যাপেল নোটবুক, আইম্যাক ইত্যাদির আবিষ্কারক।

তিনি বর্তমান সময়ের সবথেকে প্রভাবিত বিজনেস ম্যান এবং তার সৃষ্টি তাঁকে প্রযুক্তি জগতে চির অমর করে রাখবে।

ব্যর্থতাঃ আমরা আজকে যেই অ্যাপেল দেখছি, এই অ্যাপেল প্রথম দিকে ঐভাবে সফলতার মুখ দেখতে পারে নি। তিনি অনেকটা হতাশ হয়ে এবং নতুন উদ্ভাবন আসছিলো না বলে  টিম ম্যানেজমেন্টের ছেড়ে নেক্সট নামে অন্য কোম্পানি প্রতিষ্ঠান করেন তিনি।  নেক্স্যটও ভালো ফল দিচ্ছিলো না, যেকারনে তিনি আবার তার স্বপ্নের অ্যাপেলে ফিরে আসেন। কঠোর সাধনার ফলে তিনি এটিকে ক্রিয়েটিভ ওয়েতে নিয়ে যেতে সামর্থ্য হন।

অবশেষে আজকের অ্যাপেলঃ স্টিভ জবস সব সময় চেষ্টা করতেন কীভাবে নতুন আইডিয়া দিয়ে অন্যের চেয়ে নতুনভাবে শুরু করা যায়। যা অন্য মানুষ নতুন জিনিস হিসাবে নিবে। নতুন নতুন সৃষ্টি তৈরি করবে। এভাবে কঠোর সাধনার ফল আজকের এই প্রযুক্তি চমক অ্যাপেল।

আলমারি (বিখ্যাত ছোট গল্প)

লেখকঃ নরেন্দ্রনাথ মিত্র
(রচনাকাল : জুলাই ১৯৫৬)

স্ত্রীর সঙ্গে রোজ ঝগড়া হয় পরিতোষ সরকারের। দামি কাপড়চোপড় রাখবার মতো একটা আলমারি নেই ঘরে। ট্রাঙ্কে সুটকেসে অতি কষ্টে জিনিসপত্র গুঁজে গুঁজে রাখতে হয়। একটা কিছু বার করতে হলে একেবারে লণ্ডভণ্ড, কুরুক্ষেত্র কাণ্ড। সুপ্রীতি বলে, “আমি আর পারব না তোমার ঘর গোছাতে। আর এই দামি দামি জিনিসগুলি যদি নষ্ট হয় তার জন্যেও আমাকে দায়ী করতে পারবে না।“ পরিতোষ নির্লিপ্ত থাকবার ভাণ করে বলে, “ বেশ, করব না দায়ী। সব দোষ তুমি আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ো।” সুপ্রীতি রাগ করে বলে, “দোষ চাপালে আর কী হবে। গেলে আমার জিনিসই সব যাবে।”
তা ঠিক। বসনভূষণের ভাগ সুপ্রীতিরই চৌদ্দ আনা। পরিতোষের নিজস্ব বলতে আছে একটা গরদের পাঞ্জাবি, পৈত্রিক আমলের একখানি শাল। বিয়ের পাওয়া আংটি আর সোনার বোতাম। পরিতোষ কিছুতেই ব্যবহার করে না। ওর নাকি লজ্জা করে। তবে ঘড়ি আর পেনটি সঙ্গে সঙ্গেই রাখে। সুপ্রীতি খোঁচা দিয়ে বলে, “ও-সবও তো গয়না। ওগুলিও তো আমার বাবার দেওয়া জিনিস।”

পরিতোষ জবাব দেয়, “তোমার বাবার দেওয়া সব জিনিসের ওপরই যে আমার বিরাগ একথা, বলতে পার না। “ সুপ্রীতি বলে, “থাক থাক, আর রসিকতা করতে হবে না। তুমি যে কত ভালবাস আমাকে তা জানা আছে।”
বছর দশেক হল বিয়ে হয়েছে ওদের। তার এক বছর পর থেকেই এ ধশরনের খোঁটা শুনতে হচ্ছে পরিতোষকে। শুনতে শুনতে কান-সওয়া হয়ে গেছে।
কিন্তু পত্নীপ্রীতির যে নিদর্শন সুপ্রীতি স্বামীর কাছে চায় তা এনে দেওয়া তার পক্ষে দুঃসাধ্য। গ্লাস-বসানো ইস্পাতের আলমারির দাম অন্তত শ’তিনেক টাকা।
পরিতোষের দেড় মাসের মাইনে। বিমা কোম্পানির কেরানি যদি অমন নবাবি করে তার সংসার থেকে ছ’মাসের মধ্যে অভাব অনটন দূর হবে না। শুধু স্ত্রীর আবদার মেটালেই তো চলবে না পরিতোষকে। সংসারে পোষ্য অনেক। দুটি ছেলেমেয়ে হয়েছে। একটি বোন কলেজে পড়ে। ভাইটিও সামনেবার স্কুলের গণ্ডি ছাড়বে। খরচ কি কম! পরিতোষ যুক্তি দেখায়, “ তা ছাড়া অমন দামি আর ভারি জিনিস ভাড়াটে বাড়িতে এনে রাখতে নেই। টানাটানিতে কম হাঙ্গামা-হুজ্জোত পোহাতে হয়? কোথায় কখন থাকি তার কি কিছু ঠিক আছে? আমাদের তো সারা শহর ভরে বাসঘর আর বাসরঘর ছড়ানো। আজ বেলেঘাটা—কাল পাথুরেঘাটা, আজ টালা, কাল টালিগঞ্জ। একটু স্থিত হয়ে বসে নিই—।”
সুপ্রীতি বলে, “হুঁ, কবে তুমি চৌরঙ্গিতে বাড়ি করবে তারপর সব ফার্নিচার আসবে, সেই ভরসাতেই থাকি।” দু-চারদিন যায়, আর সুপ্রীতি সেই আলমারির কথা তোলে। বলে , “ আজও গিয়েছিলাম বিডন রোয়ে সুচিরাদের বাড়ি। কী চমৎকার আলমারিই না কিনেছে। শাড়ি রাখ, গরম কাপড়চোপড় রাখ, সব ব্যাপারেই সুবিধে। গয়নাগাঁটিও বেশ নিশ্চিন্তে রাখা যায়। কেউ খুলে নিয়ে যাবে এমন সাধ্য নেই।
অনেকগুলি ড্রয়ার। যেটায় যা খশি রাখ। তারপরে গ্লাস সেট করা আছে। তুমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে তার সামনে বসে দিব্যি দাড়ি কামাতে পারবে।” পরিতোষ চোখ কপালে তুলে বলে, “ওরে বাবা। ওই আলমারি যদি একবার কিনে বসি তাহলে কি সারা জীবনের মধ্যে আমার ব্লেড কেনার পয়সা জুটবে?”
সুপ্রীতি রাগ করে পাশ ফিরে শুতে শুতে বলে, না জোটাই উচিত। তুমি দাড়ি গোঁফ রেখে বনে চলে যাও। বিয়ে করাই তোমার ভুল হয়েছিওল।”
পরিতোষ স্বীকার করে বলে, “ভুলটা বড় পরে ধরা পড়েছে। এখন আর শোধরাবার জো নেই। কিন্তু তুমি বোধ হয় এহনও শোধরাতে পার। সুচিরাদের বাড়িতে কিছুদিন যাতায়াত বন্ধ করে দাও। তাহলে জিনিসটা তোমার চোখেও পড়বে না। মনও খারাপ হবে না।” সুচিরা দত্ত কলেজে বছর দুই সুপ্রীতির সহিপাঠিনী ছিল। বড় ডাক্তারের মেয়ে মেজো ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।
সে-রাত্রে সুপ্রীতি পরিতোষের সঙ্গে কিছুতেই কথা বলল না। তাতে পরিতোষ যে খুব চিন্তিত হল তা নয়। এমন মান ভঞ্জনের পালা দাম্পত্য-জীবনে ঘুরে ফিরে আসে। না আসলেই বরং জীবন একঘেয়ে হয়ে যায়। কিন্তু দিন দুই বাদে এক কাণ্ড ঘটল তাতে পরিতোষ আর অত অবিচলিত থাকতে পারল না। অফিস থেকে ফিরে ঘরে এসে ঢুকতে না ঢুকতেই ছোট বোন অঞ্জলি আর ছোট ভাই রন্টু একসঙ্গে এসে খবর দিল, “দাদা, সর্বনাশ হয়েছে।”
পরিতোষ উদ্বিঘ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কো হয়েছে রে? খোকন আর বুড়ি কোথায়? কোন অ্যাক্সিডেন্ট?” অঞ্জলি আশ্বাস দিয়ে বলল যে, সে সব কিছু নয়। পরিতোষের ছেলেমেয়ে দুটি ভালই আছে। কিন্তু সর্বনাশ হয়েছে তার স্ত্রীর। ট্রাঙ্কের ভিতরে পোকা ঢুকে বেনারসি আর মুর্শিদাবাদি সিল্ক দু’খনাই কেটে ফেলেছে। ঘরের দিকে ভাল করে তাকিয়েই ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার বুঝতে পারল পরিতোষ। সারা ঘরময় সুপ্রীতির পোশাকি শাড়িগুলি ছড়ানো। পুজোর সময় আর বিবাহবার্ষিকীতে পঁচিশ ত্রিশ টাকার যে সব শাড়ি পরিতোষ স্ত্রীকে উপহার দিয়েছে সব মেঝেয় লুটোতে লুটোপুটি খাচ্ছে। আর পাশের ঘরে তক্তপোষের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে ফুলে ফুলে কাঁদছে সুপ্রীতি। এক পাশে কীটদষ্ট বেনারসিখানা পড়ে রয়েছে। দোরের কাছে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে খোকন আর বুড়ি। পরিতোষের সাত আর পাঁচ বছরের দুটি পুত্রকন্যা। পরিতোষ স্ত্রীর পিঠে সস্নেহে হাত রেখে বলল, “বোধহয় এখনও রিপু করিয়ে নিলে চলবে। আর অন্য শাড়িগুলিও বাক্সে তুলে রাখ। নষ্ট করে লাভ কী।”
সুপ্রীতি বলল, “তুলে আর কী হবে। ওই ভাঙা বাক্সে তুলে রাখাও যা, বাইরে ফেলে দেওয়াও তাই। একই কথা। আমার কিছু আর রাখবার দরকার নেই। তুমি রাখতে হয় রাখো।” শেষ পর্যন্ত পরিতোষ প্রতিশ্রুতি দিল, এক সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রীতির পছন্দমতো আলমারি সে কিনে আনবে। একই সঙ্গে যা মজবুত আর শৌখিন। বড় আয়না-বসানো আলমারি। পাশাপাশি দাঁড়ালে, দু’জনের প্রতিচ্ছবি যাতে ফুটে উঠবে। ঘরে একখানা বড় আয়না না থাকলে কি চলে। আয়্নায় তো শুধু মুখই দেখা যায় না, সুখও দেখা যায়। দু’খানা সুখী পরিতৃপ্ত মুখের প্রতিবিম্ব। তার চেয়ে বড় ঐশ্বর্য আর কী আছে।
আলমারি তো কিনবে। কিন্তু তিনশো সাড়ে তিনশো টাকা কোত্থেকে জোগাড় করবে পরিতোষ। হাজার দুই টাকার ইন্সিওরেন্স আছে। তার থেকে…ধার নেওয়া যায়। কিন্তু সুপ্রীতি বলল, ‘ খবরদার ও টাকায় তুমি হাত দিতে পারবে না।”
ব্যাঙ্কে একটা নামমাত্র একাউন্ট আছে। সর্বসাকুল্যে তাতে শখানেক টাকাও হবে ক না সন্দেহ। পরিতোষ বলল, “নিজেদের আলমারি্ত আনতে গিয়ে কি পরের সিদুকে হাত দেব?”
সুপ্রীতি বলল, “কে তা দিতে বলেছে? দরকার নেই এখন কিনে? পুজোর সময় যদি বোনাস টোনাস পাও তখন দেখা যাবে।”
কিন্তু পরিতোষের মনটা খুঁত খুঁত করতে থাকে। কথা যতদিন দেয়নি ততদিন একরকম ছিল। কিন্তু কথা দেওয়ার পর জিনিসটা কিনে না আনতে পারলে স্ত্রীর কাছে আর মান থাকে না। সুপ্রীতি তাহলে ভাববে পরিতোষ একেবারেই পথের ফকির। এত বড় শহরে তিনশো সাড়ে তিনশো টাকা সংগ্রহ করে আনার মতো ক্ষমতাই নেই তার।
সুতরাং পরিতোষ ধারের চেষ্টায় নামল। ক্রেডিট মানে কৃতিত্ব। যার যত ধার বেশি, তার বুদ্ধির ধার তত অসামান্য। গোপনে দুওজন সহকর্মী অফিসারের কাছ থেকে শ’খানেক টাকা নিল। পুরনো সহপাঠীদের মধ্যে একজন ইটের কারবার করে। টোকা দিয়ে দেখল সুরথের হৃদয় অতখানি শক্ত হয়ে যায়নি। জরুরি দরকার এবং অসুখবিসুখের দোহাই দেওয়ায় সে শ’দুইই টাকা দিল। বাকি পঞ্চাশ টাকা তুলল নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে। মনটা তবু খুত খুত করতে লাগল, কোথায় যেন হীনমন্যতা আছে এই ধার করার মধ্যে। বন্ধুদের কাছে হাত পাততে গেলে যে হতমান হতে হয় তাতে পরিতোষের কোনও সন্দেহ নেই।
টাকা জোগাড় হওয়ার পর সেদিন বিকাল বেলায় স্ত্রীকে নিয়ে যখন জিনিস কিনতে বেরুল তখন মনে আর তেমন গ্লানি রইল না পরিতোষের। এই উপলক্ষে সে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। সুপ্রীতির নিষেধ সত্বেও শ্যামবাজার থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে চলল বরবাজারের দিকে। পথে স্ত্রীকে নিয়ে ভাল একটা রেস্টুরেন্টে খেল। সুপ্রীতি হেসে বলল, “জিনিসটা আগে কেনা হোক। পথেই যদি এত টাকা উড়িয়ে দাও তাহলে জিনিসটা কিনবে কী করে।”

পরিতোষ বলল, “বিশ্বাস কর, এই টাকা ক’টা ওড়াবার শক্তি আমার আছে।”
সুপ্রীতি বলল, “কিন্তু কেন এত ব্যয় করছ শুনি। আজ তো আমার ম্যারেজ ডে অ্যানিভারসারি নয়, কি অন্য কোন উৎসব-টুৎসব নয়।”
পরিতোষ বলল, “আজ আলমারির জন্মোৎসব। আর সে আলমারি শুধু ইস্পাত দিয়ে তৈরি নয়, আমাদের দু’জনের আনন্দ দিয়ে তৈরি।”
সুপ্রীতি বলল, “থাক, কবিত্ব রাখ। ফুলটুল কেনার সময় ওরকম কবিত্ব মানায়।”
পরিতোষ প্রতিবাদ করল, “আর আলমারির বেলায় বুঝি কবিত্ব বেমানান? আজকালকার কবিদের ও ধরনের পক্ষপাত নেই।”নেতাজী রোডে গাড়িটাকে জোর করে ছাড়িয়ে দিল সুপ্রীতি। বলল, “আর মিটার বাড়িয়ে লাভ নেই। এবার হেঁটে হেঁটে দেখতে দেখতে চল।”
পরিতোষ বলল, “ অন্য জিনিস দেখব কী। তোমাকে দেখেই কূল পাইনে।”
সুপ্রীতি মুখ টিপে হেসে বলল, “সত্যি?”
পরিতোষ বলল, সত্যি ছাড়া আর কী। এমন সাজ সেজে এসেছ যে চেনাই যায় না।”
সুপ্রীতি খুশি হয়ে বলল, “বাড়াবাড়ি কোরো না।”
ওরা প্রথমে নামজাদা দোকানের দামি জিনিসগুলি দেখতে লাগল। জিনিস দেখে চোখ লুব্ধ হয়, কিন্তু দাম শুনে সেই চোখই আবার কপালে ওঠে। সুপ্রীতি বলল, “অত দামি জিনিস কেনার দরকার নেই। তা ছাড়া দেখেনি আরও পাঁচটা দোকান। এত দামের জিনিস নেব, যাচাই করে নেব না?”
দেখতে দেখতে ওরা অপেক্ষাকৃত ছোট একটা দোকানে উঠল। চন্দ এন্ড কোম্পানি। কয়েকটা আলমারি ভালই দেখা গেল। বড় দোকানের অনুকরণে তৈরি হলেও জিনিস খারাপ নয়, দেখতেও বেশ সুন্দর। সেলসম্যান দাম বলল, আড়াইশো। আশ্চর্য, সুচিরার ঘরে যা দেখে এসেছে সুপ্রীতি, অবিকল সেই রকম। শুধু কোম্পানির নাম আলাদা। কত বেশি কমিশন চন্দ এন্ড কোম্পানি দিতে পারবেন তাই নিয়ে কথাবার্তা চলছে হঠাৎ পিছনের অফিস রুম থেকে স্যুটপরা সুদর্শন এক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন। বয়স পঁয়ত্রিশ ছত্রিশের বেশি নয়। ছিমছাম শৌখিন পুরুষ।
সুপ্রীতি তার দিকে চেয়ে একটুকাল অবাক হয়ে থেকে বলল, “ নির্মলদা তুমি এখানে?”
সেলসম্যান বলল, “ আমাদের বড়বাবু মিঃ চন্দ। ওঁদেরই তো কোম্পানি।”
সুপ্রিটি খুশিহয়ে বলল, “তাই বল!”
নির্মল বলল, “এবার আমি জিজ্ঞেস করছি, তুমি এখানে!”
সুপ্রীতি বলল, “আলমারি কিনতে। কিন্তু বড্ড বেশি দাম তোমাদের দোকানে।“
নির্মল স্মিতমুখে বলল, “ তা দাম তো একটু বেশি হবেই। জিনিস নেবে দাম দেবে না?”
নির্মল নিজেই যেচে পরিচয় করল পরিতোষের সঙ্গে। নিজেরও পরিচয় দিল। বলল, “সুপ্রীতি আমাদের অঙ্কের প্রফেসরের মেয়ে। অঙ্কের চেয়ে বেশি ভয় করতাম ওকে। এত উৎপাত করত। রাজসাহী শহর সুদ্ধ লোক ওর জ্বালায় অস্থির ছিল।”
জ্বালাটা কী রকমের, অস্থিরতাই বা কী ধরনের তা পরিতোষ নির্মলের মুখের দিকে চেয়ে অনুমান করার চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠল না। নির্মলের মুখে হাসি, চোখে চাতুর্য। চেহারায় আভিজাত্য।
খানিকক্ষণ ধরে কুশল প্রশ্নের বিনিময় চলল। পরিতোষের কানে কয়েকটি অশ্রুতপূর্ব সর্বনাম। যে সঙ্কেত ভেদ করবার চাবি তার কাছে নেই। তারপর নির্মল জজ্ঞাসা করল, “কোন আলমারিটা তোমার পছন্দ তাই বল।” সুপ্রীতি উল্লাসের সুরে বলল, “পছন্দ তো সবগুলিই।”
নির্মল বলল, “বেশ তো সবই নাও। পাইকারি দরে দিতে পারব।”
পরিতোষ হাতঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, “ আমার একটু তাড়া আছে। একটা আলমারিই নেব আমরা।”
নির্মল বলল, “বেশ তো।” কিন্তু মুশকিলের কথা হল, নির্মল কিছুতেই দাম নেবে না। সুপ্রীতি দামের কথা বলায় হেসেই উড়িয়ে দিল নির্মল। ধমকও দিল দুটো-একটা। পরিতোষের দিকে চেয়ে বলল, “ ওর বিয়ের সময় দেশে ছিলাম না। তখন কিছুই প্রেজেন্ট করতে পারিনি। আজ এটা ওকে দিলাম।”
সুপ্রীতি বলল, “না না সে কি হয়।”
নির্মল বলল, “ না হয় তোমার মাসিমার কাছে দাম দিয়ে এসো। আমি নিতে পারব না।” মাসিমা মানে নির্মলের মা। তিনি আজও বেঁচে আছেন। শেষ পর্যন্ত আলমারিটা বিনামূল্যেই সুপ্রীতিকে গছিয়ে দিল নির্মল। সুপ্রীতি একান্তে স্বামীকে বলল, “আচ্ছা দামটা আমরা অন্যভাবে শোধ করে দেব।”
পরিতোষ নিঃশব্দে রাস্তায় নেমে এল। ধার-করা টাকাগুলি এবার অনায়াসে শোধ দিতে পারবে। কিন্তু অত বড় আলমারিটা যে ঘরজুড়ে থাকবে তাকে ভুলবে কী করে?

রস (বিশ্বের ১০০টি ছোট গল্পের একটি)

লেখকঃ নরেন্দ্রনাথ মিত্র।

কার্তিকের মাঝামাঝি চৌধুরীদের খেজুর বাগান ঝুরতে শুরু করল মোতালেফ। তারপর দিন পনের
যেতে না যেতেই নিকা করে নিয়ে এলো পাশের বাড়ির রাজেক মৃধার বিধবা স্ত্রী মাজু খাতুনকে। পাড়া-পড়শি সবাই তো অবাক। এই অবশ্য প্রথম সংসার নয় মোতালেফের। এর আগের বউ বছরখানেক আগে মারা গেছে। তবু পঁচিশ-ছাবি্বশ বছরের জোয়ান পুরুষ মোতালেফ। আর মাজু খাতুন ত্রিশে না পৌঁছালেও তার কাছাকাছি গেছে। ছেলেপুলের ঝামেলা অবশ্য মাজু খাতুনের নেই। মেয়ে ছিল একটি, কাঠিখালীর শেখদের ঘরে বিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ঝামেলা যেমন নেই, তেমনি মাজু খাতুনের আছেই বা কী। বাঙ্-সিন্দুক ভরে যেন কত সোনাদানা রেখে গেছে রাজেক মৃধা, মাঠভরে যেন কত ক্ষেত-ক্ষামার রেখে গেছে যে তার ওয়ারিশি পাবে মাজু খাতুন। ভাগের ভাগ ভিটার পেয়েছে কাঠাখানেক, আর আছে একখানি পড়ো পড়ো শণের কুঁড়ে। এই তো বিষয়-সম্পত্তি, তারপর দেখতেই বা এমনকি একখানা ডানাকাটা হুরীর মতো চেহারা। দজ্জাল মেয়েমানুষের আঁটসাঁট শক্ত গড়নটুকু ছাড়া কী আছে মাজু খাতুনের যা দেখে ভোলে পুরুষেরা, মন তাদের মুগ্ধ হয়।
সিকদারবাড়ি, কাজীবাড়ির বউ-ঝিরা হাসাহাসি করল, ‘তুক করছে মাগী, ধুলা-পড়া দিছে চৌখে।’
মুন্সীদের ছোট বউ সাকিনা বলল, ‘দিছে ভালো করছে। দেবে না? অমন মানুষের চৌখে ধুলা-পড়া দেওয়নেরই কাম। খোদা তো পাতা দেয় নাই চৌখে। দেখছো তো কেমন ট্যারাইয়া ট্যারাইয়া চায়। ধুলা ছিটাইয়া থাকে তো বেশ করছে।’
কথাটা মিথ্যা নয়, চাউনিটা একটু তেরছা তেরছা মোতালেফের। বেছে বেছে সুন্দর মুখের দিকে তাকায়। সুন্দর মুখের খোঁজ করে ঘোরে তার চোখ। অল্প বয়সী খুবসুরত চেহারার একটি বউ আনবে ঘরে, এত দিন ধরে সেই চেষ্টাই সে করে এসেছে। কিন্তু দরে পটেনি কারো সঙ্গে। যারই ঘরে একটু ডাগর গোছের সুন্দর মেয়ে আছে সেই হেঁকে বসেছে পাঁচ কুড়ি-সাত কুড়ি। মোতালেফের সবচেয়ে পছন্দ হয়েছিল ফুলবানুকে।
চরকান্দার এলেম সেখের মেয়ে ফুলবানু। আঠারো-উনিশ বছর হবে বয়স। রসে টলটল করছে সর্বাঙ্গ, টগবগ করছে মন। ইতিমধ্যে অবশ্য এক হাত ঘুরে এসেছে ফুলবানু। খেতে-পরতে কষ্ট দেয়, মারধর করে—এই সব অজুহাতে তালাক নিয়ে এসেছে কইডুবির গফুর সিকদারের কাছ থেকে। আসলে বয়স বেশি আর চেহারা সুন্দর নয় বলে গফুরকে পছন্দ হয়নি ফুলবানুর। সেই জন্যই ইচ্ছা করে নিজে ঝগড়া-কোন্দল বাধিয়েছে তার সঙ্গে। কিন্তু এক হাত ঘুরে এসেছে বলে কিছু ক্ষয়ে যায়নি ফুলবানুর, বরং চেকনাই আর জেল্লা খুলেছে দেহের, রসের ঢেউ খেলে যাচ্ছে মনের মধ্যে। চরকান্দায় নদীর ঘাটে ফুলবানুকে একদিন দেখেছিল মোতালেফ। একনজরেই বুঝেছিল যে সেও নজরে পড়েছে। চেহারাখানা তো বেমানান নয় মোতালেফের। নীল লুঙ্গি পরলে ফরসা ছিপছিপে চেহারায় চমৎকার খোলতাই হয় তার, তা ছাড়া এমন ঢেউ-খেলানো টেরিকাটা বাবরিই বা এ তল্লাটে কজনের মাথায় আছে। ফুলবানুর সুনজরের কথা বুঝতে বাকি ছিল না মোতালেফের। খুঁজে খুঁজে গিয়েছিল সে এলেম সেখের বাড়িতে। কিন্তু এলেম তাকে আমল দেয়নি। বলেছে, গতবার যথেষ্ট শিক্ষা হয়ে গেছে তার। এবার আর না দেখে-শুনে যার-তার হাতে মেয়ে দেবে না। আসলে টাকা চায় এলেম। গাঁটের কড়ি যা খরচ করতে হয়েছে মেয়েকে তালাক নেওয়াতে গিয়ে, সুদে-আসলে তা পুরিয়ে নিতে চায়। গুনাগার চায় সেই লোকসানের। আঁচ নিয়ে দেখেছে মোতালেফ সে গুনাগার দু-এক কুড়ি নয়, পাঁচ কুড়ি একেবারে। তার কমে কিছুতেই রাজি হবে না এলেম। কিন্তু অত টাকা সে দেবে কোত্থেকে।
মুখ ভার করে চলে আসছিল মোতালেফ। আশ্শেওড়া আর চোখ-উদানের আগাছার জঙ্গলা ভিটার মধ্যে ফের দেখা হলো ফুলবানুর সঙ্গে। কলসি কাঁকে জল নিতে চলেছে ঘাটে। মোতালেফ বুঝল সময় বুঝেই দরকার পড়েছে তার জলের।
এদিক-ওদিক তাকিয়ে ফিক করে একটু হাসল ফুলবানু, ‘কী মেঞা, গোসা কইরা ফিরা চললা নাকি?’
‘চলব না? শোনলা নি টাকার খাককাই তোমার বাজানের!’
ফুলবানু বলল, ‘হ, হ, শুনছি। চাইছে তো দোষ হইছে কি? পছন্দসই জিনিস নেবা বাজানের গুনা, তার দাম দেবা না?’
মোতালেফ বলল, ‘ও খাককাইটা আসলে বাজানের নয়, বাজানের মাইয়ার। হাটে-বাজারে গেলেই পারো ধামায় উইঠা।’
মোতালেফের রাগ দেখে হাসল ফুলবানু, ‘কেবল ধামায় ক্যান, পালায় উইঠা বসব। মুঠ ভইরা ভইরা সোনা-জহরত ওজন কইরা দেবা পালায়। বোঝব ক্ষেমতা, বোঝব কেমন পুরুষ মাইনষের মুঠ।’ মোতালেফ হনহন করে চলে যাচ্ছিল। ফুলবানু ফের ডাকল পিছন থেকে, ‘ও সোন্দর মিঞা, রাগ করলানি? শোন শোন।’
মোতালেফ ফিরে তাকিয়ে বলল, ‘কী শুনব?’
এদিকে-ওদিকে তাকিয়ে আরো একটু এগিয়ে এলো ফুলবানু, ‘শোনবা আবার কী, শোনবা মনের কথা। শোন, বাজানের মাইয়া টাকা চায় না, সোনা-দানাও চায় না, কেবল মান রাখতে চায় মনের মাইনষের। মাইনষের ত্যাগ দেখতে চায়, বুঝছ?’
মোতালেফ ঘাড় নেড়ে জানাল, বুঝেছে।
ফুলবানু বলল, ‘তাই বইলা আকাম-কুকাম কইরো না মেঞা, জমি ক্ষেত বেচতে যাইও না।’
বেচবার মতো জমি ক্ষেত অবশ্য মোতালেফের নেই, কিন্তু সে গুমর ফুলবানুর কাছে ভাঙল না মোতালেফ, বলল, ‘আইচ্ছা, শীতের কয়ডা মাস যাউক, ত্যাগও দেখাব, মানও দেখাব। কিন্তু বিবিজানের সবুর থাকবেনি দেখবার?’
ফুলবানু হেসে বলল, ‘খুব থাকব। তেমন বেসবুর বিবি ভাইবো না আমারে।’
গায়ে এসে আর একবার ধারের চেষ্টা করে দেখল মোতালেফ। গেল মলি্লকবাড়ি, মুখজ্যেবাড়ি, সিকদারবাড়ি, মুন্সীবাড়ি—কিন্তু কোথাও সুরাহা হয়ে উঠল না টাকার। নিলে তো আর সহজে হাত উপুড় করবার অভ্যেস নেই মোতালেফের। ধারের টাকা তার কাছ থেকে আদায় করে নিতে বেজায় ঝামেলা। সাধ করে কে পোয়াতে যাবে সেই ঝক্কি।
কিন্তু নগদ টাকা ধার না পেলেও শীতের সূচনাতেই পাড়ার চার-পাঁচ কুড়ি খেজুর গাছের বন্দোবস্ত পেল মোতালেফ। গত বছর থেকেই গাছের সংখ্যা বাড়ছিল, এবার চৌধুরীদের বাগানের দেড় কুড়ি গাছ বেশি হলো। গাছ কেটে হাঁড়ি পেতে রস নামিয়ে দিতে হবে। অর্ধেক রস মালিকের, অর্ধেক তার। মেহনত কম নয়, এক একটি করে এতগুলো গাছের শুকনো মরা ডালগুলো বেছে বেছে আগে কেটে ফেলতে হবে। বালিকাচায় ধার তুলে তুলে জুতসই করে নিতে হবে ছ্যান। তারপর সেই ধারালো ছ্যানে গাছের আগা চেঁছে চেঁছে তার মধ্যে নল পুঁততে হবে সরু কঞ্চি ফেড়ে। সেই নলের মুখে লাগসই করে বাঁধতে হবে মেটে হাঁড়ি। তবে তো রাতভরে টুপ টুপ করে রস পড়বে সেই হাঁড়িতে। অনেক খাটুনি, অনেক খেজমত। শুকনো শক্ত খেজুর গাছ থেকে রস বের করতে হলে আগে ঘাম বের করতে হয় গায়ের। এ তো আর মায়ের দুধ নয়, গাইয়ের দুধ নয় যে বোঁটায়-বানে মুখ দিলেই হলো।
অবশ্য কেবল খাটতে জানলেই হয় না, গাছে উঠতে-নামতে জানলেই হয় না, গুণ থাকা চাই হাতের। যে ধারালো ছ্যান একটু চামড়ায় লাগলেই ফিনকি দিয়ে রক্ত ছোটে মানুষের গা থেকে, হাতের গুণে সেই ছ্যানের ছোঁয়ায় খেজুর গাছের ভেতর থেকে মিষ্টি রস চুইয়ে পড়ে। এ তো আর ধান কাটা নয়, পাট কাটা নয় যে কাঁচির পোঁচে গাছের গোড়াসুদ্ধ কেটে নিলেই হলো। এর নাম খেজুর গাছ কাটা। কাটতেও হবে, আবার হাত বুলোতেও হবে। খেয়াল রাখতে হবে গাছ যেন ব্যথা না পায়, যেন কোনো ক্ষতি না হয় গাছের। একটু এদিক-ওদিক হলে বছর ঘুরতে না ঘুরতে গাছের দফারফা হয়ে যাবে, মরা মুখ দেখতে হবে গাছের। সে গাছের গুঁড়িতে ঘাটের পৈঠা হবে, ঘরের পৈঠা হবে, কিন্তু ফোঁটায় ফোঁটায় সে গাছ থেকে হাঁড়ির মধ্যে রস ঝরবে না রাতভরে।
খেজুর গাছ থেকে রস নামাবার বিদ্যা মোতালেফকে নিজ হাতে শিখিয়েছিল রাজেক মৃধা। রস সম্বন্ধে এসব তত্ত্বকথা আর বিধিনিষেধও তার মুখের। রাজেকের মতো অমন নামডাকওয়ালা ‘গাছি’ ধারে-কাছে ছিল না। যে গাছের প্রায় বারো আনা ডালই শুকিয়ে এসেছে, সে গাছ থেকেও রস বেরুত রাজেকের হাতের ছোঁয়ায়। অন্য কেউ গাছ কাটলে যে গাছ থেকে রস পড়ত আধ-হাঁড়ি, রাজেকের হাতে পড়লে সে রস গলা-হাঁড়িতে উঠত। তার হাতে খেজুর গাছ ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত গৃহস্থরা। গাছের কোনো ক্ষতি হতো না, রসও পড়ত হাঁড়ি ভরে। বছর কয়েক ধরে রাজেকের শাগরেদ হয়েছিল মোতালেফ, পিছনে পিছনে ঘুরত, কাজ করত সঙ্গে সঙ্গে। শাগরেদ দু-চারজন আরো ছিল রাজেকের—সিকদারদের মকবুল, কাজীদের ইসমাইল। কিন্তু মোতালেফের মতো হাত পাকেনি কারো। রাজেকের স্থান আর কেউ নিতে পারেনি তার মতো।
কিন্তু কেবল গাছ কাটলেই তো হবে না কুড়িতে কুড়িতে, রসের হাঁড়ি বয়ে আনলেই তো হবে না বাঁশের বাখারির ভারায় ঝুলিয়ে, রস জ্বাল দিয়ে গুড় করবার মতো মানুষ চাই। পুরুষ মানুষ গাছ থেকে কেবল রসই পেড়ে আনতে পারে, কিন্তু উনান কেটে, জ্বালানি জোগাড় করে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে বসে সেই তরল রস জ্বাল দিয়ে তাকে ঘন পাটালি গুড়ে পরিণত করবার ভার মেয়েমানুষের ওপর। শুধু কাঁচা রস দিয়ে তো লাভ নেই, রস থেকে গুড় আর গুড় থেকে পয়সায় কাঁচা রস যখন পাকা রূপ নেবে তখন সিদ্ধি, কেবল তখনই সার্থক হবে সকল খেজমত, মেহনত। কিন্তু বছর দুই ধরে বাড়িতে সেই মানুষ নেই মোতালেফের। ছেলেবেলায় মা মরেছিল। দুই বছর আগে বউ মরে ঘর একেবারে খালি করে দিয়ে গেছে।
সন্ধ্যার পর মোতালেফ এসে দাঁড়াল মাজু খাতুনের ঝাঁপ-আঁটা ঘরের সামনে, ‘জাগনো আছো নাকি মাজু বিবি?’
ঘরের ভেতর থেকে মাজু খাতুন সাড়া দিয়ে বলল, ‘কেডা?’
‘আমি মোতালেফ। শুইয়া পড়ছি বুঝি? কষ্ট কইরা উইঠা যদি ঝাঁপটা একবার খুইলা দিতা, কয়ডা কথা কইতাম তোমার সাথে।’
মাজু খাতুন উঠে ঝাঁপ খুলে দিয়ে বলল, ‘কথা যে কী কবা তা তো জানি। রসের কাল আইছে আর মনে পইড়া গেছে মাজু খাতুনরে। রস জ্বাল দিয়া দিতে হবে। কিন্তু সেরে চাইর আনা কইরা পয়সা দেবা মেঞা। তার কমে পারব না। গতরে সুখ নাই এ বছর।’
মোতালেফ মিষ্টি করে বলল, ‘গতরের আর দোষ কী বিবি। গতর তো মনের হাত ধইরা ধইরা চলে। মনের সুখই গতরের সুখ।’
মাজু খাতুন বলল, ‘তা যাই কও তাই কও মেঞা, চাইর আনার কমে পারব না এবার।’
মোতালেফ এবার মধুর ভঙ্গিতে হাসল, ‘চাইর আনা ক্যান বিবি, যদি ষোলো আনা দিতে চাই, রাজি হবা তো নিতে?’
মোতালেফের হাসির ভঙ্গিতে মাজু খাতুনের বুকের মধ্যে একটু যেন কেমন করে উঠল, কিন্তু মুখে বলল, ‘তোমার রঙ্গ তামাশা থুইয়া দাও মেঞা। কাজের কথা কবা তো কও, নইলে যাই, শুই গিয়া।’
মোতালেফ বলল, ‘শোবাই তো। রাইত তো শুইয়া ঘুমাবার জন্যেই। কিন্তু শুইলেই কি আর চোখে ঘুম আসে মাজু বিবি, না চাইয়া চাইয়া এই শীতের লম্বা রাইত কাটান যায়?’
ইশারা-ইঙ্গিত রেখে এরপর মোতালেফ আরো স্পষ্ট করে খুলে বলল মনের কথা। কোনো রকম অন্যায় সুবিধা-সুযোগ নিতে চায় না সে। মোল্লা ডেকে কলমা পড়ে সে নিকা করে নিয়ে যেতে চায় মাজু খাতুনকে। ঘর-গেরস্তালির ষোলো আনা ভার তুলে দিতে চায় তার হাতে।
প্রস্তাব শুনে মাজু খাতুন প্রথমে অবাক হয়ে গেল, তারপর একটু ধমকের সুরে বলল, ‘রঙ্গ তামাশার আর মানুষ পাইলা না তুমি! ক্যান, কাঁচা বয়সের মাইয়াপোলার কি অভাব হইছে নাকি দেশে যে তাগো থুইয়া তুমি আসবা আমার দুয়ারে!’
মোতালেফ বলল, ‘অভাব হবে ক্যান মাজু বিবি। কম বয়সী মাইয়াপোলা অনেক পাওয়া যায়। কিন্তু শত হইলেও তারা কাঁচা রসের হাঁড়ি।’
কথার ভঙ্গিতে একটু কৌতুক বোধ করল মাজু খাতুন, বলল, ‘সাঁচাই নাকি! আর আমি?’
‘তোমার কথা আলাদা। তুমি হইলা নেশার কালে তাড়ি আর নাশতার কালে গুড়, তোমার সাথে তাগো তুলনা?’
তখনকার মতো মোতালেফকে বিদায় দিলেও তার কথাগুলো মাজু খাতুনের মন থেকে সহজে বিদায় নিতে চাইল না। অন্ধকার নিঃসঙ্গ শয্যায় মোতালেফের কথাগুলো মনের ভেতরটায় কেবলই তোলপাড় করতে লাগল। মোতালেফের সঙ্গে পরিচয় অল্প দিনের নয়। রাজেক যখন বেঁচে ছিল, তার সঙ্গে সঙ্গে থেকে যখন কাজকর্ম করত মোতালেফ, তখন থেকেই এ বাড়িতে তার আনাগোনা, তখন থেকেই জানাশোনা দুজনের। কিন্তু সেই জানাশোনার মধ্যে কোনো গভীরতা ছিল না। মাঝে মাঝে একটু হালকা ঠাট্টা-তামাশা চলত, কিন্তু তার বেশি এগুবার কথা মনেই পড়েনি কারো। মোতালেফের ঘরে ছিল বউ, মাজু খাতুনের ঘরে ছিল স্বামী। স্বভাবটা একটু কঠিন আর কাঠখোট্টা ধরনেরই ছিল রাজেকের। ভারি কড়া-কড়া চাঁছাছোলা ছিল তার কথাবার্তা। শীতের সময় কুড়িতে কুড়িতে রসের হাঁড়ি আনত মাজু খাতুনের উঠানে আর মাজু খাতুন সেই রস জ্বাল দিয়ে করত পাটালি গুড়। হাতের গুণ ছিল মাজু খাতুনের। তার তৈরি গুড়ের সের দুই পয়সা বেশি দরে বিক্রি হতো বাজারে। রাজেক মরে যাওয়ার পর পাড়ার বেশির ভাগ খেজুর গাছই গেছে মোতালেফের হাতে। দু-এক হাঁড়ি রস কোনোবার ভদ্রতা করে তাকে খেতে দেয় মোতালেফ, কিন্তু আগেকার মতো হাঁড়িতে আর ভরে যায় না তার উঠান। গতবার মাসখানেক তাকে রস জ্বাল দিতে দিয়েছিল মোতালেফ। চুক্তি ছিল দুই আনা করে পয়সা দেবে প্রতি সেরে, কিন্তু মাসখানেক পরেই সন্দেহ হয়েছিল মোতালেফের মাজু খাতুন গুড় চুরি করে রাখছে, অন্য কাউকে দিয়ে গোপনে গোপনে বিক্রি করাচ্ছে সেই গুড়, ষোলো আনা জিনিস পাচ্ছে না মোতালেফ। ফলে কথান্তর মনান্তর হয়ে সে বন্দোবস্ত ভেস্তে গিয়েছিল। কিন্তু এবার তার ঘরে রসের হাঁড়ি পাঠাবার প্রস্তাব নিয়ে আসেনি মোতালেফ, মাজু খাতুনকেই নিজের ঘরে নিয়ে যেতে চেয়েছে। এমন প্রস্তাব পাড়ার আধ-বুড়োদের দলের আরো করেছে দু-একজন কিন্তু মাজু খাতুন কান দেয়নি তাদের কথায়। ছেলে ছোকরাদের মধ্যে যারা একটু বেশি বাড়াবাড়ি রকমের ইয়ার্কি দিতে এসেছে, তাদের কান কেটে নেওয়ার ভয় দেখিয়েছে মাজু খাতুন। কিন্তু মোতালেফের প্রস্তাব সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। তাকে যেন তেমনভাবে তাড়ান যায় না। তাকে তাড়ালেও তার কথাগুলো ফিরে ফিরে আসতে থাকে মনের মধ্যে। পাড়ায় এমন চমৎকার কথা বলতে পারে না আর কেউ, অমন খুবসুরত মুখ কারোও নেই, অমন মানানসই কথাও নেই কারো মুখে।
মোতালেফকে আরো আসতে হলো দু-এক সন্ধ্যা, তারপর নীল রঙের জোলাকী শাড়ি পরে, রং-বেরঙের কাঁচের চুড়ি হাতে দিয়ে মোতালেফের পিছনে পিছনে তার ঘরের মধ্যে এসে ঢুকল মাজু খাতুন।
ঘরদোরের কোনো শ্রী-ছাঁদ নেই, ভারি অপরিষ্কার আর অগোছাল হয়ে রয়েছে সব। কোমরে আঁচল জড়িয়ে মাজু খাতুন লেগে গেল ঘরকন্নার কাজে। ঝাঁট দিয়ে দিয়ে জঞ্জাল দূর করল উঠানের, লেপেপুঁছে ঝকঝকে, তকতকে করে তুলল ঘরের মেঝে।
কিন্তু ঘর আর ঘরনির দিকে তাকাবার সময় নেই মোতালেফের, সে আছে গাছে গাছে। পাড়ায় আরো অনেকের—বোসেদের, বাঁডুজ্যেদের গাছের বন্দোবস্ত নিয়েছে মোতালেফ। গাছ কাটছে, হাঁড়ি পাতছে, হাঁড়ি নামাচ্ছে, ভাগ করে দিচ্ছে রস। পাঁকাটির একখানা চালা তুলে দিয়েছে মাজু খাতুনকে মোতালেফ উঠানের পশ্চিম দিকে। সারে সারে উনান কেটে তার ওপর বড় বড় মাটির জ্বালা বসিয়ে সেই চালাঘরের মধ্যে বসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রস জ্বাল দেয় মাজু খাতুন। জ্বালানির জন্যে মাঠ থেকে খড়ের নাড়া নিয়ে আসে মোতালেফ, জোগাড় করে আনে খেজুরের শুকনো ডাল। কিন্তু তাতে কি কুলোয়? মাজু খাতুন এর-ওর বাগান থেকে জঙ্গল থেকে শুকনো পাতা ঝাঁট দিয়ে আনে ঝাঁকা ভরে ভরে, পলো ভরে ভরে, বিকেলে বসে বসে দা দিয়ে টুকরো টুকরো করে শুকনো ডাল কাটে জ্বালানির জন্যে। বিরাম নেই বিশ্রাম নেই, খাটুনি গায়ে লাগে না, অনেক দিন পরে মনের মতো কাজ পেয়েছে মাজু খাতুন, মনের মতো মানুষ পেয়েছে ঘরে।
ধামা ভরে ভরে হাটে-বাজারে গুড় নিয়ে যায় মোতালেফ, বিক্রি করে আসে চড়া দামে! বাজারের মধ্যে সেরা গুড় তার। পড়ন্ত বেলায় ফের যায় গাছে গাছে হাঁড়ি পাততে। তল্লাবাঁশের একেকটি করে চোঙা ঝুলতে থাকে গাছে। সকালে রসের হাঁড়ি নামিয়ে ঝরার চোঙা বেঁধে দিয়ে যায় মোতালেফ। সারা দিনের ময়লা রস চোঙাগুলোর মধ্যে জমা থাকে। চোঙা বদলে গাছ চেঁছে হাঁড়ি পাতে বিকেলে এসে। চোঙার ময়লা রস ফেলা যায় না। জ্বাল দিয়ে চিটে গুড় হয় তাতে তামাক মাখবার। বাজারে তাও বিক্রি হয় পাঁচ আনা ছয় আনা সের। দুবেলা দুবার করে এতগুলো গাছে উঠতে-নামতে ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ে মোতালেফের, পৌষের শীতেও সর্বাঙ্গ দিয়ে ঘাম ঝরে চুইয়ে চুইয়ে। সকালবেলায় রোমশ বুকের মধ্যে ঘামের ফোঁটা চিকচিক করে। পায়ের নিচে দূর্বার মধ্যে চিকচিক করে রাত্রির জমা শিশির। মোতালেফের দিকে তাকিয়ে পাড়া-পড়শিরা অবাক হয়ে যায়। চিরকালই অবশ্য খাটিয়ে মানুষ মোতালেফ, কিন্তু বেশি উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে, দিনরাত এমন কলের মতো পরিশ্রম করতে এর আগে তাকে দেখা যায়নি কোনো দিন। ব্যাপারটা কী? গাছ কাটা অবশ্য মনের মতো কাজই মোতালেফের, কিন্তু পছন্দসই মনের মানুষ কি সত্যিই এলো ঘরে?
সেরা গাছের সবচেয়ে মিষ্টি দুই হাঁড়ি রস আর সের তিনেক পাটালি গুড় নিয়ে মোতালেফ গিয়ে একদিন উপস্থিত হলো চরকান্দায় এলেম সেখের বাড়িতে। সেলাম জানিয়ে এলেমের পায়ের সামনে নামিয়ে রাখল রসের হাঁড়ি, গুড়ের সাজি, তারপর কোঁচার খুঁটের বাঁধন খুলে বের করল পাঁচখানা দশ টাকার নোট, বলল, ‘অর্ধেক আগাম দিলাম মেঞাসাব।’
এলেম বলল, ‘আগাম কিসের?’
মোতালেফ বলল, ‘আপনার মাইয়ার—’
তাজা করকরে নোট বেছে নিয়ে এসেছে মোতালেফ। কোনায়, কিনারে চুল পরিমাণ ছিঁড়ে যায়নি কোথাও, কোনো জায়গায় ছাপ লাগেনি ময়লা হাতের। নগদ পঞ্চাশ টাকা। নোটগুলোর ওপর হাত বুলোতে বুলোতে এলেম বলল, ‘কিন্তু এখন আর টাকা আগাম নিয়া আমি কী করব মেঞা? তুমি তো শোনলাম নেকা কইরা নিছ রাজেক মেরধার কবিলারে। সতীনের ঘরে যাবে ক্যান আমার মাইয়া। মাইয়া কি ঝগড়া আর চিল্লাচিলি্ল করবে, মারামারি-কাটাকাটি কইরা মরবে দিনরাইত।’
মোতালেফ মুচকে হাসল। বলল, ‘তার জৈন্যে ভাবেন ক্যান মেঞাসাব। গাছে রস যদ্দিন আছে, গায়ে শীত যদ্দিন আছে, মাজু খাতুনও তদ্দিন আছে আমার ঘরে। দক্ষিণা বাতাস খেললেই সব সাফ হইয়া যাবে উইড়া।’
এলেম সেখ জলচৌকি এগিয়ে দিল মোতালেফকে বসতে, হাতের হুঁকোটা এগিয়ে ধরল মোতালেফের দিকে, তারিফ করে বলল, ‘মগজের মধ্যে তোমার সাঁচাই জিনিস আছে মিঞা, সুখ আছে তোমার সাথে কথা কইয়া, কাম কইরা।’
ফুলবানুকেও একবার চোখের দেখা দেখে যেতে অনুমতি পেল মোতালেফ। আড়াল থেকে দেখতে-শুনতে ফুলবানুর কিছু বাকি ছিল না। তবু মোতালেফকে দেখে ঠোঁট ফুলালো ফুলবানু, ‘বেসবুর কেডা হইল মেঞা? এদিকে আমি রইলাম পথ চাইয়া তুমি ঘরে নিয়া ঢুকাইলা আর একজনারে।’
মোতালেফ জবাব দিল, ‘না ঢুকায়ে করি কী!’
মানের দায়ে জানের দায়ে বাধ্য হয়ে তাকে এই ফন্দি খুঁজতে হয়েছে। ঘরে কেউ না থাকলে পানি-চুনি দেয় কে, প্রাণ বাঁচে কী করে। ঘরে কেউ না থাকলে রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করে কে। আর সেই গুড় বিক্রি করে টাকা না আনলেই বা মান বাঁচে কী করে।
ফুলবানু বলল, ‘বোঝলাম, মানও বাঁচাইলা, জানও বাঁচাইলা, কিন্তু গায়ে যে আরেকজনের গন্ধ জড়াই রইল, তা ছাড়াবা কেমনে।’
মনে এলেও মুখ ফুটে এ কথাটা বলল না মোতালেফ যে মানুষ চলে গেলে তার গন্ধ সত্যিই আরেকজনের গায়ে জড়িয়ে থাকে না, তা যদি থাকত তাহলে সে গন্ধ তো ফুলবানুর গা থেকেও বেরুতে পারত। কিন্তু সে কথা চেপে গিয়ে মোতালেফ ঘুরিয়ে জবাব দিল, বলল, ‘গন্ধের জন্য ভাবনা কি ফুল বিবি। সোডা-সাবান কিনা দেব বাজার গুনা। ঘাটের পৈঠায় পা ঝুলাইয়া বসব তোমারে লইয়া। গতর গুনা ঘইসা ঘইসা বদ গন্ধ উঠাইয়া ফেইলো।’
মুখে আঁচল চাপতে চাপতে ফুলবানু বলল, ‘সাঁচাই নাকি?’
মোতালেফ বলল, ‘সাঁচা না ত কি মিছা? শুইঙ্গা দেইখো তখন নতুন মাইনষের নতুন গন্ধে ভুরভুর করবে গতর। দক্ষিণা বাতাসে চুলের গন্ধে ফুলের গন্ধে ভুরভুর করবে, কেবল সবুর কইরা থাকো আর দুইখান মাস।’
ফুলবানু আর একবার ভরসা দিয়ে বলল, ‘বেসবুর মানুষ ভাইবো না আমারে।’
যে কথা সেই কাজ মোতালেফের, দুই মাসের বেশি সবুর করতে হলো না ফুলবানুকে। গুড় বেচে আরো পঞ্চাশ টাকা জোগাড় হইতে মোতালেফ মাজু খাতুনকে তালাক দিল। কারণটাও সঙ্গে সঙ্গে পাড়া-পড়শিকে সাড়ম্বরে জানিয়ে দিল। মাজু বিবির স্বভাব-চরিত্র খারাপ। রাজেকের দাদা ওয়াহেদ মৃধার সঙ্গে তার আচার-ব্যবহার ভারি আপত্তিকর।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগে বিবাহিত/চাকুরীজীবি/ব্যবসায়ী ও অছাত্র নেতাদের তালিকাকরণ !

বাংলাদেশ ছাত্রলীগে বিবাহিত/চাকুরীজীবি/ব্যবসায়ী ও অছাত্র নেতাদের তালিকাকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে গোপনীয়তা রক্ষা করে যে কেউ প্রমানসহ বা প্রমান ছাড়ায় অভিযোগ প্রদান করতে পারবেন। Google Docs এর মাধ্যমে এ অভিযোগ প্রদান করা যাবে। 

যেভাবে অভিযোগ প্রদান করবেনঃ-
১। অভিযুক্ত নেতার নাম লিখুন।
২। অভিযোগের ধরন চিহ্নিত করুন।
৩। অভিযুক্ত নেতার টেলিফোন নম্বর প্রদান করুন। (যদি থাকে)
৪। অভিযুক্ত নেতার ইউনিট ও ইউনিটের নাম লিখুন।
৫। প্রমাণ আছে নাকি নায়, নিশ্চিত করুন।
৬। আপনার সাথে এই ব্যাপারে পরে যোগাযোগ করা যাবে কিনা নিশ্চিত করুন
৭। সর্বশেষ, সাবমিট করুন।

অথাবা, এ লিংক এ যানঃ https://docs.google.com/forms/d/e/1FAIpQLScgHCyC38JNJX03-u_7Jb9Hy5VYIY2t6AXoFiZs68hSLGwcWw/viewform






কৌশিক থেকে মাশরাফিঃ এক পাগলার নাম


বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বোলিং আক্রমনের প্রাণ ভোমরা বলা হয় তাকে। মাঠে খেলেন নিজের শতভাগ উজাড় করে, জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসেন ক্রিকেট। বার বার বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়েন, থাকতে হয় মাঠের বাইরে। আবার ফর্ম নিয়ে ফিরেও আসেন সগৌরবে। সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের কয়েকটি অপারেশন হয় তার লিগামেন্টে। অনেকেই ভেবেছেন এবারই বুঝি ছেড়ে দেবেন ক্রিকেট। কিন্তু সবার আশঙকাকে ভুল প্রমাণিত করে তিনি ফিরে আসেন স্বরুপে। খেলার জন্য এভাবে জীবন বাজী তিনিইতো রাখতে পারেন। কারণ নাম যে তার মাশরাফি বিন মুর্তূজা।

মাশরাফি বিন মর্তুজা ৫ অক্টোবর ১৯৮৩, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা নড়াইল-এ জন্মগ্রহন করেন। ছোটবেলা থেকে মাশরাফি ছিলেন দুরন্ত। বাবা মায়ের আদর করে তাকে ডাকেন কৌশিক।লেখাপড়া ভালোভাবে মনোযোগ না দিয়ে বাবা গোলাম মর্তুজার বাধা ডিঙিয়ে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন নিয়ে পড়ে থাকতেন। পাশাপাশি বাড়ির পাশে চিত্রা নদীতে সাঁতার কাটাই ছিলো তার আসল কাজ। বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি করা, নারিকেল গাছে উঠে ডাব খাওয়া, নড়াইলের ফেরিঘাটে গিয়ে আড্ডা মারা ছিলো তার অন্যতম কাজ। এখনও সময় পেলে গ্রামের বাড়ি নড়াইলে গিয়ে বাইক নিয়ে চিত্রা ব্রিজের উপর আড্ডা দিয়ে সময় পার করেন মাশরাফি।

বয়স তখন মাত্র ১৮ বছর। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজ। ডাক পেলেন কৌশিক।একই বছর ২৩শে নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরান এর সাথে।

তবে অনুর্ধ ১৯ দলের হয় খেলার সময় কৌশিকের গতিময় ও আক্রমনাত্বক বোলিংয়ের জন্য নজর কাড়েন তৎকালীন অস্থায়ী কোচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার এন্ডি রবার্টসের।

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ থেকে অধিনায়কের দায়িত্ব কাধেঁ ওঠে ম্যাশের। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, প্রথম ম্যাচেই মারাত্বক ইঞ্জুরীতে পড়েন তিনি। কিন্তু দেড় বছর পর আবার স্বরুপে ফিরে আসার ইঙ্গিত নিয়ে ইউরোপ সফরে যান দলের সাথে। ইংলান্ডকে প্রথম বারের মত বাংলাদেশ পরাজিত করে মাশরাফির অধিনায়কত্বে। কিন্তু এরপর আবার ইঞ্জুরীতে, যার কারনে খেলা হয়নি ঘরের মাঠের ২০১১ বিশ্বকাপেও!

টাকার জন্য খেলেননা মাশরাফি বরং দেশের জন্যই মরিয়া হয়ে খেলেন। এমনও দিন গেছে যে ব্যাথার ইনজেকশন নিয়েই মাঠে নেমে গেছেন শিশুসুলভ মাশরাফি।

একদিন মাশরাফি বলেছিলেন "জীবনে যে টাকা আমি আয় করেছি সে টাকা দিয়ে আমার ছেলেমেয়েরাও পর্যন্ত বসে খেতে পারবে, আমি দেশের জন্য ক্রিকেট খেলি, আমি আরো অনেক দিন ক্রিকেট খেলতে চাই দেশের স্বার্থে"

নিজ পরিবার নিয়ে জাতীয় দলের পারফেক্ট সেনাপতি বলেন, আমার বাসার প্রায় সব খাবারই নড়াইল থেকে আসে। চেষ্টা করি বাচ্চারা যেন স্বাস্থ্যকর খাবারটা খায়। পোশাক নিয়ে অত ভাবি না। একমাত্র ঈদ ছাড়া বাচ্চাদের জন্য দামি পোশাক কিনি না, তবে বাচ্চাদের খাবারের দিকে দৃষ্টি থাকে সবসময়।

সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছিলেন "ইশ! আমাদের যদি একটি মাশরাফি থাকতো"।

তার দুপায়ের উপর দিয়ে গেছে কয়েকবার অপারেশন টেবিলের ছুরি। এরপরও তাকে কেউ রুখতে পারে নি। অপারেশনের পরও খেলে যাচ্ছেন বাংলাদেশের হয়ে। ইঞ্জুরিতে পড়ে অনেক বড় বড় খেলোয়ার অবসর নিয়েছে। ইঞ্জুরিতে পড়ার পর ব্রেটলি, শেন ভন, এন্ড্রু ফ্লিনটপের মত প্লেয়াররা ক্রিকেটে ফিরতে পারেন নি। কিন্তু মাশরাফি এরকম ইঞ্জুরি নিয়েও খেলে যাচ্ছেন। কারন তিনি মনে করেন বাংলাদেশের জন্য তার এই জীবন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধারা যেমন জীবন দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন ঠিক তেমনি তার জীবন দিয়ে খেলে বাংলাদেশকে জয় এনে দিতে চান।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারী এখনও মাশরাফি বিন মর্তুজা। এর আগ পর্যন্ত ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপে ১৩টি উইকেট নিয়ে সবার শীর্ষে ছিলেন রাজ্জাক। আফগানিস্তানের জাভেদ আহমাদি ও আসগর স্তানিকজাঈকে আউট করে রাজ্জাককে স্পর্শ করেন মাশরাফি।

মাশরাফি একজন মারকুটে ব্যাটসম্যানও। ভারতের বিপক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় তিনি পরপর চার বলে ছক্কা পেটান। সেই ওভার থেকে তিনি ২৬ রান সংগ্রহ করেন যা কোন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের জন্য এক ওভারে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

বাংলাদেশ দলের বিশাল দায়িত্ব তাঁর কাঁধে, তাই ভেঙে পড়েন না তিনি। সবার আগে যে দেশ! সেই দেশের প্রেরণায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রথম ম্যাচের আগুন-পরীক্ষায়। আর তাতে কী দারুণভাবেই না জ্বলে উঠলেন! মাঠে মাশরাফি জ্বলে উঠলে সেদিন প্রতিপক্ষের কী হয়, নিশ্চয় তা সবার জানা।

ব্যথা-যন্ত্রণা তো তাঁর নিত্যসঙ্গী। শুধু মনে নয়, ব্যথা ছিল শরীরেও। চোটের সঙ্গে লড়তে লড়তে ক্লান্ত হননি, ভেঙে পড়েননি; সংশপ্তকের মতো উঠে দাঁড়িয়েছেন বারবার। নতুন উদ্যমে ফিরেছেন মাঠে। দেখিয়েছেন সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স। হাঁটুর চোটের কারণে নি-ক্যাপ পরে মাঠে নামতে হয়। নামেন। কিন্তু এতকিছুর পরও নিজেকে শতভাগ উজাড় করে দিতে এতটুকু কার্পণ্য করেন না তিনি। কারণ তিনি অপরাজেয়। তিনিই মাশরাফি বিন মুর্তূজা।

- সংগৃহিত।

বান্দরবানের অপরূপ দর্শনীয় স্পট

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি এবং কক্সবাজার থেকে বান্দরবান বাস যোগাযোগ রয়েছে। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরেবালাঘাটায় রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মন্দির। এটি সম্পূর্ণরূপে দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার মন্দিরগুলোর অনুকরণে তৈরি করাহয়েছে এবং বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মুর্তিটি এখানে রয়েছে। স্থানীয়ভাবে এটি হলো "বুদ্ধ ধাতু জাদি"। এছাড়া শহরের মধ্যেই রয়েছে জাদিপাড়ার রাজবিহার এবং উজানীপাড়ার বিহার। শহর থেকে চিম্বুকের পথে যেতে পড়বে বম ও ম্রো উপজাতীয়দের গ্রাম। প্রান্তিকহ্রদ, জীবননগর এবং কিয়াচলং হ্রদ আরও কয়েকটি উল্লেখ্য পর্যটন স্থান। রয়েছে মেঘলা সাফারী পার্ক, যেখানে রয়েছে দুটি সম্পূর্ণ ঝুলন্তসেতু। সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ, ভ্রমণ পিয়াসীদের জন্য হতে পারে একটি মনোহর অভিজ্ঞতা। বান্দরবান শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরেঅবস্থিত শৈল প্রপাত একটি আকর্ষণীয় পাহাড়ি ঝর্ণা।
এছাড়া বাংলাদেশের উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং এবং বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং এই বান্দরবান জেলাতেই অবস্থিত। মৌসুমগুলোতে এইদুটি পর্বতশৃঙ্গে আরোহন করার জন্য পর্যটকদের ভীড় জমে উঠে। পর্যটকরা সাধারণত বগা লেক থেকে হেঁটে কেওক্রাডং এ যান। অনেকেইআছেন যারা কেওক্রাডং না গিয়ে বগা লেক থেকে ফিরে আসেন। এই হ্রদটিও বিশেষ দর্শনীয় স্থান। হ্রদসন্নিহিত এলাকায় বম উপজাতিদেরবাস। এছাড়া অন্যান্য আকর্ষণের মধ্যে আছে:

চিম্বুক
পুরো বান্দারবান জেলাই প্রাকৃতিক দৃশ্যে ভরপুর। বান্দরবান থেকে পুরো রাস্তা আকাবাঁকা উচুনিচু। চিম্বুকে যাওয়ার পথের পাশে রয়েছেঅসংখ্য উপজাতির আবাসস্থল। ঘরগুলো মাচার মতো উঁচু করে তৈরি। চিম্বুকের চূড়া থেকে যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই শুধু পাহাড় আরপাহাড়। সবুজ শ্যামল পাহাড়ের দৃশ্য চোখ জুড়ানোর অবস্থা। পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে প্রবাহমান সাংগু নদী যা আপনাকে নিয়ে যাবে অনেকদূরে। স্থানীয় উপজাতীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চিম্বুকের চূড়ায় দাঁড়িয়ে অনেক সময় মেঘও ধরা যায়।
ঢাকা থেকে বাস/ট্রেন/বিমানযোগে চট্রগ্রাম এসে সেখান থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বান্দারবান থেকে চিম্বুকে যেতে হবে জিপগাড়িতে। যাকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় চান্দের গাড়ি। চান্দের গাড়িতে গেলে নামতে হবে বুলি বাজারে। ভাড়া করা জিপ নিয়ে সরাসরি চূড়ায়যাওয়া যায়। নিজস্ব জিপ নিয়েও যাওয়া যায়। বান্দরবান জেলা সদর থেকে ৩৬৪ টি ছোট-বড় মোড় অতিক্রম করে ২৬ কিঃমিঃ দূরে চিম্বুকেযেতে হবে। 
বান্দারবানে থাকার জন্য রয়েছে নানা রকম আবাসিক হোটেল। এছাড়া সরকারী রেস্টহাউসসহ জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ, বনবিভাগ, এলজিইডি ও পার্বত্য জেলা পরিষদের রেস্টহাউসও রয়েছে। এছাড়াও বান্দরবান জেলা থেকে ৪.২ কিঃমিঃ দূরে চিম্বুক সড়কেরমিলনছড়িতে রয়েছে দি গাইড টু্রস লিঃ এর হিল সাইড রিসোর্ট। এখানে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি মনোরম কটেজ ঘর ওডরমিটরি। কটেজগুলোর একক ভাড়া ৭৫০ টাকা দুজন ১০০০ টাকা। পুরো কটেজ ভাড়া নেওয়া যায়। বোম ঘরের ভাড়া একক ৪৫০ টাকা,দুজন ৭০০ টাকা, মারমা ঘরের ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা, দুজনের ৪০০ টাকা, ডরমিটরির ভাড়া প্রতি বেড ১৫০ টাকা । বেশি বেড নিলেভাড়া কম।

নীলগিরি
নীলগিরি : বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৪৭ কিলোইমটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে বান্দরবান-থানছি সড়কে পাহাড় চূড়ায় নীলগিরি পর্যটনকেন্দ অবস্থিত। যে কোনো গাড়িতে চড়ে সরাসরি নীলগিরিতে যাওয়া যায়। সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ২ হাজার ২ শত ফুট। একানকারপ্রকৃতির কারুকাজ সবাইকে মুগ্ণ করে । এই রোদ, এই বৃষ্টি, আকাশে মেঘের গর্জন সেই সাথে রংধনুর হাসিমাখা আলোএক রুশ্মি,বাতাসের সাথে ছন্দ আর তাল মিলিয়ে প্রকৃতির বৈবিত্র্যময় এই পরিবর্তনের এই পরিবর্তনের দৃশ্যগুলো পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন কর্তৃক চিম্বুক-থানচি সড়কটি নির্মাণের সময় ম্রো জনগোষ্ঠী অধ্যুষিতবান্দরবান থানিছ সড়কের কাপ্রু পাড়া এলাকায় প্রথমে নিরাপত্তা চৌকি হিসেবে এটি নিমিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাএদর পরিকল্পনায় এটি একটি পর্যটন কেন্দ্রের পূর্ণতা লাভ করে। এখানে মেঘদূত, আকাশনীলা, নীলাঙ্গনা, মারমা হাউজসহনানা নামের আকর্ষীয় কটেজ রয়েছে। আছে একটি ক্যাফেটেরিয়া। বর্তমানে দেশি বিদেশি পর্যটকরা প্রতিদিনই নীলগিরি ভ্রমণে আসছেন।
দিনের বেলায় এই স্থান থেকে খালি চোখে বঙ্গোপসাগর ও জাহাজ চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়া ছোট ছোট পাহাড়ের কোল ঘেয়ে বয়েযাওয়া সাঙ্গু নদীর আকাবাকা দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য সকলকে আকর্ষণ রে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই নীলিগিরি রিসোর্টে অবস্থান ওরাত্রিযাপনের জন্য সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড হেডকোয়াটার এর সাথে আগাম যোগাযোগ করতে হয়। প্রকৃতির অপরুপ মনমুগ্ধকরনয়নাভিরাম এই দৃশ্যগুলি পর্যটকদের স্মৃতিতে ধরে রাখার জন্য নীলগিরি রিসোর্ট অত্যন্ত চমকার একটি স্থান। এই স্থানটি অনেকের নিকটবাংলার দার্জিলিং নামে পরিচিত।


মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স

বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের পাশে পাহাড়বেষ্টিত স্বচ্ছ জলোর মনোরম লেক। বান্দরবান শহর থেকে ৪.৫ কিলোমিটার দূরে এই কমপেস্নক্স রয়েছে চিত্তবিনোদনের নানাবিধ উপকরণ। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে একটি চিড়িয়াখানাসহ পর্যটন কেন্দটি পরিচালিত হচ্ছে।
প্রবেশ মূল্য : জনপ্রতি ৩০ টাকা
অবস্থান :  শহর এথেক ৪ কি: মি: দূরে জেলা পরিষদের বিপরীতে সুন্দর মনোরম পরিবেশে অবস্থিত।
বিশেষ আকর্ষণ : এখানে একটি মনোরম কৃত্রিম হ্রদ, শিশু পার্ক, সাফারী পার্ক, পেডেল বোট, ঝুলন্ত ব্রিজ, চিড়িয়াখানা, পিকনিক স্পট রয়েছে।
অবকাশ : এখানে জেলা প্রশাসন পরিচালিত একটি সুন্দর রেস্ট হাউজ রয়েছে, যেখানে রাত্রিযাপন করা যায়। রেস্ট হাউজটি দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়ায় পাওয়া  যায়।
ভাড়া : মেঘলা রেস্ট হাউজে রাত্রিযাপনের জন্য চারটি কক্ষ রয়েছে। প্রতিকক্ষের ভাড়া ২০০০/- (প্রতিদিন)।
বুকিং ভাড়া : ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মেঘলা ০৩৬১-৬২৫০৬, ০১৭১৭২-৭১৮০৫১, ০১৭১৪-২৩০৩৫৪

যাতায়ত : শহর থেকে চান্দের গাড়ি বেবি টেক্সি, জীপ, কার যোগ যাওয়া যায়।

বগালেক
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বগালেক। কেওকারাডাং এর কোল ঘেঁষে বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান।

পাহাড়ের উপরে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে বগালেক। এ পানি দেখতে প্রায় নীল রঙের। এ লেকের পাশে বাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র উপজাতীয় বম ও খুমী সম্প্রদায়।  অদ্ভুদ সুন্দর এই নীল রঙ্গের লেকের সঠিক গভীরতা বের করা যায়নি এখনও পর্যন্ত। স্থানীয়ভাবে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ ফুট বলা হলেও সোনার মেশিনে ১৫১ ফুট পর্যন্ত গভীরতা পাওয়া গেছে। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ একটি লেক। এর আশেপাশে পানির কোন উৎসও নেই। তবে বগালেক যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগাছড়া (জ্বালা-মুখ) নামে পরিচিত। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে লেকের পানি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে  হয়ে যায় ঘোলাটে।

রাত্রি যাপনের জন্য বগালেকে জেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি রেষ্টহাউস নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় বম উপজাতী সম্প্রসাদায় কিছু ঘর ভাড়ায় দিয়ে থাকে। বগালেকের পাড়েই বসবাসরত বম সম্প্রদায় পর্যটকদের জন্য রান্না-বান্নার ব্যবস্থা করে থাকে ।  রুমা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ক্রয় করে নেওয়াই শ্রেয়।

উল্লেখ্য যে, নিরাপত্তার জন্য রুমা ও বগালেক সেনা ক্যাম্পে পর্যটকদের রিপোর্ট করতে হয়। স্থানীয় গাইড ছাড়া পায়ে হেটে রুমা থেকে অন্য কোন পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়া উচিত নয়।
যাতায়তঃ
শুষ্ক মৌসুমে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জীপ ষ্টেশন থেকে রুমাগামী জীপে করে রুমা সেনা গ্যারিসন (রুমা ব্রীজ) পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে নৌকায় করে ২০ মিনিট পথ পাড়ি দিয়ে রুমা উপজেলা সদরে যেতে হয়। বর্ষাকালে রুমাগামী জীপ কইক্ষ্যংঝিড়ি পর্যন্ত যায়। তারপর ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে প্রায় ১ ঘন্টার অধিক পথ পাড়ি দিয়ে রুমা সদরে যেতে হয় । রুমা থেকে পায়ে হেটে অথবা জীপে করে বগালেক যেতে হয়। বর্ষা মৌসুমে বগা লেক যাওয়া নিতান্তই কষ্টসাধ্য তাই বগালেক ভ্রমনে শীতকালকে বেছে নেওয়া শ্রেয়ে। বান্দরাবন থেকে রুমা উপজেলা সদরে যেতে খরচ হবে জন প্রতি ৮০/- অথবা পুরো জীপ ভাড়া করলে ২২০০-২৫০০/- আর রুমা থেকে বগালেক যেতে জনপ্রতি ৮০-১০০/- অথবা পুরো জীপ ভাড়া করলে ২২০০-২৫০০/- পর্যন্ত।

শৈলপ্রপাত

বান্দরবান রুমা সড়কের ৮ কিলোমিটার দূরে শৈলপ্রপাত অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি। ঝর্ণার হিমশীতল পানি এখানে সর্বদা বহমান। এই ঝর্ণার পানিগুলো খুবই স্বচ্ছ এবং হীম শীতল। বর্ষাকালে এ ঝর্ণার দৃশ্য দেখা গেলেও ঝর্ণাতে নামা দুস্কর, বছরের বেশীর ভাগ সময় দেশী বিদেশী পর্যটকে ভরপুর থাকে। রাস্তার পাশে শৈল প্রপাতের অবস্থান হওয়ায় এখানে পর্যটকদের ভিড় বেশী দেখা যায়। এখানে দুর্গম পাহাড়ের কোল ঘেশা আদিবাসী বম সম্প্রদায়ের সংগ্রামী জীবন প্রত্যক্ষ করা।

বান্দরবান শহর থেকে টেক্সি, চাঁদের গাড়ি কিংবা প্রাইভেট কার ও জীপ ভাড়া করে শৈলপ্রপাতে যাওয়া যায়। শহর থেকে জীপ গাড়ীতে ৬০০-৭০০ টাকা এবং চাঁদের গাড়ীতে ৪৫০-৫০০ টাকা লাগবে।


প্রান্তিক লেক


প্রান্তিক লেক- যেমন তার কাব্যিক নাম, ঠিক তেমনই কাব্যিক আর মোহনীয় রূপ নিয়ে সবুজ আর নীলের আঁচল বিছিয়ে শুয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন্ডিত কুমারী হ্রদটি। বান্দরবান থেকে কেরাণীহাট যাবার পথে হলুদিয়া নামক স্থানে এটি অবস্থিত। কেরাণীহাট থেকে ২০ মিনিট গাড়ি চালালে এ লেকে পৌছানো সম্ভব। জেলা সদর থেকে প্রান্তিক লেকের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার।

প্রায় ২৯ একর এলাকা নিয়ে প্রান্তিক লেকের অবস্থান। এল,জি,ই,ডি এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই লেকটি একটি অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান। অপূর্ব সুন্দর এ লেকের চারিপাশ বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালিতে ভরপুর। লেকের পাশে পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাস। পাখির কিচির মিচির শব্দে মুখরিত থাকে সারাটি বেলা। লেকের নীল জল আর পাড়ের সবুজ বনানী এখানে তেরি করেছে একটি ভিন্ন মাত্রা। গাছের শীতল ছায়া আর নির্মল বাতাস আপনার সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। চাইলে লেকের জলে মাছ শিকারে মেতে উঠতে পারেন। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এখানে মাছ শিকার করা সুযোগ রয়েছে।। সেটা হবে আপনার জন্য একটি বাড়তি পাওনা। অথবা পরিবার পরিজন নিয়ে আয়েশ করে ঘুরে বেড়াতে পারেন প্যাডেল বোট নিয়ে। সারাদিন নিরিবিলিতে সময় কাটানোর জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। পর্যটকদের যাতায়তের জন্য কর্তৃপক্ষ উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। পাশেই রয়েছে সেনাবাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জ। চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন।
যেভাবে যেতে হবে: বান্দরবান শহর থেকে প্রান্তিক লেকের দুরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার। বান্দরবান শহর থেকে চট্টগ্রাম বা কেরাণীহাট গামী বাসে হলুদিয়া নামক স্থানে নেমে টেক্সি বা রিক্সা করে ৩ কিলোমিটার যেতে হবে যা অনেকটা কষ্টসাধ্য। বান্দরবান শহর থেকে টেক্সি বা ল্যান্ড ত্রুজার রির্জাভ করে নিয়ে যাওয়াই ভাল।
কোথায় থাকবেন: প্রান্তিক লেকে খাবার ও রাত্রি যাপনের কোন ব্যবস্থা নেই। দিনে এসে দিনেই ফিরে যেতে হবে। এখানে পর্যটকদের নিজেদের খাবার ও পানি নিয়ে যেতে হবে। রাত্রি যাপনের জন্য মেঘলা অথবা বান্দরবান শহরে ফিরে যেতে হবে।

তাজিংডং বিজয় 


বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি বান্দরবান, বাংলাদেশের সবচেয়ে কম জনবসতিসম্পন্ন স্থান। বাংলাদেশের ভিতরে, বান্দরবানকে ঘিরে রয়েছে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি। অন্যদিকে রয়েছে মায়ানমারের চিন প্রদেশ এবং আরাকান প্রদেশের সীমান্ত। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং (১০০৩ মিটার) বান্দরবান জেলায় অবস্থিত, যা "বিজয়" বা "মদক মুয়াল" নামেও পরিচিত। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্বতশৃঙ্গ "কেওক্রাডং" (৮৮৩ মিটার) এবং সর্বোচ্চ খাল "রাইখিয়াং" এই জেলায় অবস্থিত।
অবস্থানঃ রুমা উপজেলা
দূরত্বঃ বান্দরবান সদর হতে প্রায় ৭০ কিলোমিটার
যাতায়াতঃ কেবলমাত্র শুষ্ক মৌসুমে গাড়ি করে কাছাকাছি পৌঁছা সম্ভব। বান্দরবান সদর হতে অথবা রুমা উপজেলা সদর হতে চাঁন্দের গাড়ি ভাড়া পাওয়া যায়।
রাত্রিযাপনঃ রুমাতে জেলা পরিষদসহ অন্যান্য রেস্ট হাউসে থাকার সুবিধা আছে।

কেওক্রাডং 


কিভাবে যাওয়া যায় : বগালেক থেকে শুষ্ক মৌসুমে চাঁন্দের গাড়িতে পাহাড় চূড়ায় পৌছা যায়। তবে এ জাতীয় গাড়ির সংখ্যা খুবই কম বিধায় গমনের পূর্বেই গাড়ী ভাড়া করতে হবে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কেওক্রাডং পাহাড় সফর করেছেন। তিনি এখানে একটি স্মৃতি ফলক উন্মোচন করেন।
কেওক্রাডং : এটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পবতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা প্রায় 4330 ফুট।
অবস্থান : রুমা উপজেলা।
দূরত্ব : রুমা উপজেলা সদর হতে 30 কি. মি.। (বগালেক থেকে 15 কি. মি দূরত্ব)
বিশেষ পরামশ : বগালেক থেকে শুষ্ক মৌসুমে চাঁন্দের গাড়িতে পাহাড় চূড়ায় পৌছা যায়। তবে এ জাতীয় গাড়ির সংখ্যা খুবই কম বিধায় গমনের পূর্বেই গাড়ী ভাড়া করতে হবে।


এছাড়াও উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে-

বাকলাই ঝরণা

বুদ্ধ ধাতু জাদি

চিনরি ঝিরি ঝরণা

ফাইপি ঝরণা

জাদিপাই ঝরণা

মিরিংজা পর্যটন

নাফাখুম

নীলাচল

থানচি

পতংঝিরি ঝরণা

রিজুক ঝরণা

সাংগু নদী

কিংবদন্তির আলীআলসড়ঙ্গ